৺রী শ্রীশ্রী ভবানী মাতাহি কেবলম্

শক্তিপীঠ ভবানীপুর – হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান

জয় মা কালী।। জয় বাবা শিব।। ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্য়ে শিবে সর্বার্থ সাধিকে শরণ্য়ে ত্র্য়ম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে। ওঁ সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনী। গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণী নমোহস্তুতে। জয়ন্তী মঙ্গলাকালী ভদ্রাকালী কপালীনি দুর্গাশিবা ক্ষমাধাত্রী স্বহাস্বধা নমোহস্তুতে। ওঁ শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে সর্বস্য়ার্তিহরে দেবী নারায়ণী নমোহস্তুতে।। ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্। কালিকাং দক্ষিণাং দিব্য়াং মুন্ডমালা বিভূষিতাম্। সদ্য়শ্ছিন্নশিরঃখড়্গ বামাধোর্দ্ধোকরাম্বুজাম্। অভয়ং বরদঞ্চৈব দক্ষিণাধোর্দ্ধোপাণিকাম্। মহামেঘপ্রভাং শ্য়ামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্। কন্ঠাবসক্তমুন্ডালী গলদ্রুধিরচর্চ্চিতাম। কর্ণাবতংসতানীত শবযুগ্মভয়ানকাম্। ঘোরদংষ্ট্রাং করালাস্য়াং পীনোন্নতপয়োধরাম্। শবানাং করসঙ্ঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীং হসম্মুখীম্। সৃক্কদ্বয়গলদ্রক্তধারাবিস্ফুরিতাম্। ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশানালয়বাসিনীম্। বালার্কমন্ডলাকার লোচন ত্রিতয়ান্বিতাম্। দন্তুরাং দক্ষিণব্য়াপিমুক্তালম্বিকচোর্চ্চয়াম্। শবরুপ-মহাদেব হৃদয়োপরিসংস্থিতাম্। শিবাভির্ঘোররাবাভিশ্চতুর্দিক্ষু সমন্বিতাম্। মহাকালেন চ সমং বিপরীতরতাতুরাম্। সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরাননসরোরুহাম্। এবং সঞ্চিন্তয়েৎ কালীং ধর্মকামার্থসিদ্ধিদাম্।। ওঁ নমস্তভ্য়ঃ বিরুপাক্ষ নমস্তে দিব্য়চক্ষুসে নমঃ। পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ। নমত্রিশূলহস্তায় দন্ড পাশাংসিপাণয়ে। নমঃ স্ত্রৈলোক্য়নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ। ওঁ বানেশ্বরায় নরকর্ণবতারনায়, জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায়। কর্পূরকুন্ডবলেন্দুজটাধরায়, দারিদ্রদুঃখদহনায় নমঃ শিবায়। ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ানি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বরঃ।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে থাকিয়া বিষ্ণুমায়া বলিয়া কথিত হন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে চেতনা বলিয়া কথিতা, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে বুদ্ধিরূপে অবস্থান করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল প্রাণীর মধ্য়ে নিদ্রারূপে অবস্থান করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সর্ব্বজীবের মধ্য়ে ক্ষুধারূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সর্ব্বজীবে ছায়ারূপে বর্তমান রহিয়াছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সর্ব্বজীবে শক্তিরূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে তৃষ্ণারূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে ক্ষমারূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে জাতিরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে লজ্জারূপে বিরাজ করিতেছেন, সেই দেবীকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সকল জীবের মধ্য়ে শান্তিরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সমস্ত জীবের মধ্য়ে শ্রদ্ধারূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সর্ব্বজীবে কান্তিরূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সমস্ত জীবের মধ্য়ে সম্পদরূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সমস্ত জীবের জীবিকারূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সর্ব্বজীবে স্মরণশক্তিরূপিণী, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সমস্ত জীবের হৃদয়ে দয়ারূপিণী, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সর্ব্বজীবের মধ্য়ে তুষ্টিরূপে বিরাজ করিতেছেন, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সমস্ত জীবের জননীরূপা, তাঁহাকে বার বার নমস্কার।। যে দেবী সমস্ত জীবের হৃদয়ে ভ্রান্তিস্বরূপিণী, সেই দেবীকে বার বার নমস্কার।।

ভবানীপুর বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শেরপুরে অবস্থিত সতী মাতার একান্ন পীঠের অন্যতম। হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এই শক্তিপীঠের শক্তিদেবী মা অপর্ণা এবং ভৈরব বাবা বামেশ/বামন। “তন্ত্রচূড়ামণি”তে এই শক্তিপীঠের উল্লেখ আছে এই শ্লোকে “করতোয়াতটে কর্ণে বামে বামনভৈরবঃ। অপর্ণা দেবতা যত্র ব্রহ্মরূপাকরুদ্রবঃ।।”

Bhabanipur_Shaktipeeth_Templesঐতিহাসিক পটভূমি: সত্য যুগের কোনো এক সময়ে দক্ষ রাজা তার কন্যা সতী মাতার স্বামী মহেশ্বর শিবের অনুপস্থিতিতে তাকে অপমান করার জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান করছিলেন যাতে প্রায় সকল দেব-দেবী আমন্ত্রিত ছিলেন। স্বামীর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী মাতা যজ্ঞের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেন। এই ঘটনায় রাগান্বিত হয়ে শোকাহত মহেশ্বর শিব সতী দেবীর মৃতদেহ কাঁধের উপর নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্যান্য দেবতা অনুরোধ করে এই নৃত্য থামালেন এবং সতী মাতার মৃতদেহ বিষ্ণু দেব চক্র দ্বারা ছেদন করলেন। এতে সতী মাতার দেহের বিভিন্ন অংশ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ল এবং পবিত্র পীঠস্থান শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পেল। করতোয়াতটের এই ভবানীপুরে সতী মাতার বাম পায়ের অলঙ্কার বা বাম পাঁজর বা ডান চোখ বা বিছানা পড়েছিল বলে জানা যায়।

লোককাহিনী অনুসারে, একদা একজন শাঁখাওয়ালা ভবানীপুর মন্দিরের ধারের গভীর জঙ্গলের পাশের একটি পুকুরের পাড় অতিক্রম করার সময় সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া একটি ছোট মেয়ে তার কাছে গিয়ে বলেছিল যে সে নাটোরের রাজকন্যা। মেয়েটি শাঁখাওয়ালার কাছ থেকে এক জোড়া শাঁখা কিনল এবং বলল যে সে যেন নাটোরের রানীকে প্রাসাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা ঝুড়ি থেকে তার শাঁখার দাম দিয়ে দিতে বলেন। শাঁখাওয়ালা মেয়েটির কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে শাঁখা দিয়ে দিলেন। শাঁখাওয়ালার মুখ থেকে মেয়েটির কথা শুনে নাটোরের রানী লোকজন নিয়ে সেই জায়গায় গেলেন। শাঁখাওয়ালার প্রার্থনা শুনে সেই শাঁখা-পুকুর থেকে মা ভবানী তার দুই হাতের শাঁখা তুলে দেখালেন। সেই থেকে এই শাঁখা-পুকুরটি মা তারার মহিমায় বিখ্যাত হলো এবং এখানে আগত তীর্থযাত্রীরা এই শাঁখা-পুকুরে পুণ্য স্নান করেন।

মা ভবানীমন্দিরসমূহ: চার একর (১২ বিঘা) জায়গাজুড়ে প্রাচীর বেষ্টিত মূল মন্দির চত্বর। মূল মন্দির, বেলবরণ তলা, শিব মন্দির ৪টি, পাতাল ভৈরব শিব মন্দির, গোপাল মন্দির, বাসুদেব মন্দির ও নাট মন্দির/আটচালা। উত্তরাংশে সেবা অঙ্গন, পবিত্র শাঁখা পুকুর, স্নানঘাট দুটি, বেষ্টনী প্রাচীরের বাইরে চারটি শিব মন্দির এবং একটি পঞ্চমুন্ড আসন।

ভক্তরা বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার (ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের/বিশ্বরোডের) মির্জাপুর রানীরহাট মোড় হতে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের রাস্তা বরাবর গিয়ে আম্বইল বটতলায় মোড় ঘুরে দক্ষিণ দিকের রাস্তা বরাবর গিয়ে ভবানীপুরে পৌঁছাতে পারেন। অথবা ভক্তরা বিশ্বরোড সংলগ্ন ঘোগা বটতলা বাস-স্টপেজ মোড় হতে পশ্চিম দিক বরাবর যাওয়া রাস্তা দিয়ে গিয়ে বিভিন্ন মোড় ঘুরে ভবানীপুরে পৌঁছাতে পারেন।

ভবানীপুর মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রভাতী ও বাল্যভোগ, দুপুরে পূজা ও অন্নভোগ এবং সন্ধ্যায় আরতি ও ভোগের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মন্দিরে আগত ভক্তরা প্রতি দিন মিষ্টান্ন ও অন্ন ভোগ দিতে পারেন এবং পরে প্রসাদ গ্রহন করতে পারেন।

প্রতি বৎসর মাঘ মাসে মাঘী পূর্ণিমায়  এবং চৈত্র মাসে রাম নবমীতে ভবানীপুর মন্দির প্রাঙ্গনে দুটি বড় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও শারদীয় দুর্গোৎসব, দীপান্বিতা শ্যামাপূজা এবং নবান্ন উৎসবের আয়োজনও এখানে করা হয়ে থাকে।

ভবানীপুর মন্দির সংস্কার, উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটি সাফল্যের সাথে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মন্দিরসমূহের কার্যক্রম ও মা ভবানীর সম্পত্তিসমূহ তত্ত্বাবধান করে আসছিল/আসছে।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে পাকিস্তান আমলে প্রণয়নকৃত শত্রু সম্পত্তি আইন বা দেবোত্তর বা অর্পিত সম্পত্তি আইন নামক কালো আইনের অপপ্রয়োগের কারণে নাটোরের রানী হতে প্রাপ্ত মা ভবানীর অনেক সম্পত্তি সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে বেহাত হয়েছে বা বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে যেগুলো পুনরুদ্ধার হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া কমিটির প্রাক্তন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী মা ভবানীর বেদখলকৃত প্রায় ৫০০ একর দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য গত ০২/১০/২০০৪ তারিখে আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর গত হলেও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে তামাশা করা হয়েছে ও হচ্ছে ( দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোয় প্রতিবেদন: অক্টোবর ৩ ২০১৫, অক্টোবর ২ ২০১৬, অক্টোবর ৩ ২০১৭-১, , মার্চ ৭ ২০১৭, জানুয়ারী ২৬ ২০১৮, অক্টোবর ৩ ২০১৮, অক্টোবর ৩ ২০১৯, অক্টোবর ৩ ২০২০, অক্টোবর ২ ২০২২, অক্টোবর ৩ ২০২২, অক্টোবর ২ ২০২৩, অক্টোবর ৩ ২০২৩। দৈনিক পত্রিকা করতোয়ায় প্রতিবেদন: জানুয়ারী ২৬ ২০১৮-১, , অক্টোবর ৩ ২০১৮, অক্টোবর ২ ২০১৯-১, , অক্টোবর ৩ ২০১৯, অক্টোবর ২ ২০২০-১, , অক্টোবর ২ ২০২১-১, , অক্টোবর ৩ ২০২১-১, , অক্টোবর ২ ২০২২-১, , অক্টোবর ৩ ২০২২, অক্টোবর ৩ ২০২৩)। জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তদুপরি গত ১৩/০২/২০০৭ তারিখে আদালতের রায় ভঙ্গ করতঃ এবং কমিটির কোষাধ্যক্ষ দুলাল তালুকদারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতঃ যৌথ বাহিনী (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ভক্তদের জন্য কমিটি কর্তৃক নির্মাণাধীন অতিথিশালা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়া অতিথিশালা অবৈধভাবে ভাঙ্গার প্রতিবাদমূলক কাজের জন্য মানবাধিকার আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে অবৈধ গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

ভবানীপুরের গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়সমূহ এবং বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্য়ালঘুদের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্যাতন সম্পর্কে তদন্তের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য় জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের কাছে ইমেইল পাঠানো হয়েছিল।

কমিটির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।